সবচেয়ে বিধ্বংসী ও ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে মাত্র ৯টি দেশের হাতে। এই অস্ত্র এতটাই ভয়াবহ যে, মুহূর্তের মধ্যে একটি গোটা শহরকে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিতে পারে। শুধু তা-ই নয়, বিস্ফোরণের পর ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক রেডিয়েশন, যা বছরের পর বছর মানুষ ও প্রাণিকুলের জীবনকে করে তোলে দুর্বিষহ।
১৯৪০-এর দশকে যুক্তরাষ্ট্র প্রথম পারমাণবিক বোমার পরীক্ষা চালানোর পর একে একে রাশিয়া, চীন, যুক্তরাজ্য ও ফ্রান্স এ ক্ষমতার মালিক হলেও কোনো মুসলিম দেশের নাম ছিল না এই তালিকায়। তবে সেই চিত্র বদলায় ১৯৯৮ সালের আজকের এই দিনে—প্রথম মুসলিম দেশ হিসেবে পারমাণবিক শক্তিধর রাষ্ট্রের কাতারে নাম লেখায় পাকিস্তান।
এই যাত্রাপথ ছিল না একেবারেই সহজ। পদে পদে ছিল বাধা, ছিল অর্থনৈতিক টানাপড়েন, প্রযুক্তিগত সীমাবদ্ধতা আর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার ভয়। ১৯৭১ সালে ভারতের সঙ্গে যুদ্ধে পরাজয়ের পর থেকেই পাকিস্তান শুরু করে নিজেদের পারমাণবিক স্বপ্ন বুনতে। লক্ষ্য ছিল একটাই—ভবিষ্যতের যেকোনো আগ্রাসনের ভয় দূর করা।
এরপর বহু বছরের চেষ্টা, গবেষণা আর আন্তর্জাতিক চাপ মোকাবিলা করে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করলেও পাকিস্তান তা পরীক্ষায় যায়নি। কারণ, যে কোনো পরীক্ষার পর আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞা আসার শঙ্কা ছিল প্রবল।
তবে সেই হিসাব পাল্টে যায় ১৯৯৮ সালে। ভারতের পক্ষ থেকে ১১ মে পারমাণবিক পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার শক্তির ভারসাম্য নষ্টের চেষ্টার জবাব দিতে পাকিস্তান বাধ্য হয়। আর ঠিক ১৭ দিন পর, ২৮ মে পাকিস্তান চাগাই পাহাড়ে চালায় পাঁচটি পারমাণবিক বিস্ফোরণ—যা ইতিহাসে চাগাই-I নামে পরিচিত।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে পাকিস্তান শুধু বিশ্বের সপ্তম পারমাণবিক শক্তিধর দেশই নয়, বরং প্রথম মুসলিম পারমাণবিক রাষ্ট্র হিসেবে নাম লেখায় ইতিহাসে। এই দিনটিকে সরকারিভাবে ঘোষণা করা হয় ‘ইয়ুম-ই-তাকবীর’ নামে। প্রতিবছর ২৮ মে এই দিন স্মরণে নানা আয়োজন করা হয় দেশজুড়ে।
পাকিস্তানের গণমাধ্যমগুলো জানায়, এই দিনটির তাৎপর্য নতুন প্রজন্মকে জানাতে এবং সেই ঐতিহাসিক মুহূর্ত স্মরণে বিশেষ আলোচনার আয়োজন করা হয়। বক্তারা বলেন, ১৯৯৮ সালে ভারতের পারমাণবিক পরীক্ষার মাধ্যমে দক্ষিণ এশিয়ার শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল, আর পাকিস্তানের জবাবেই ফের ভারসাম্য ফিরে আসে।
তবে, পারমাণবিক অস্ত্রের মালিকানার এই প্রতিযোগিতা বিশ্বের জন্য যেমন এক দৃষ্টান্ত, তেমনি এটি আনে শঙ্কাও। কারণ এই অস্ত্র একবার ব্যবহৃত হলে, তার প্রভাব থেমে থাকে না শুধু বিস্ফোরণের জায়গাতেই—ছড়িয়ে পড়ে আগামী বহু প্রজন্ম পর্যন্ত।